Success Story: মাস্ক বিক্রি থেকে এখন আমেরিকায় পিএইচডি
গত কয়েকদিন আগে আমার এক প্রফেসরের (BU) সাথে রিসার্চের বিষয়ে কথা বলতেছিলাম, এক পর্যায়ে হায়ার স্টাডি বিষয়ে কথা হল। স্টুডেন্টদেরকে হায়ার স্টাডির বিষয়ে কথা বললে প্রথমে যে বাধাটা আসে তাহলো আর্থিক সঙ্কট।
আমার জীবনের অসংখ্য সংগ্রামের একটা গল্প আজ আপনাদের সাথে শেয়ার করব:
ঘটনা: ২০২১
একদিন বরিশাল চরকাউয়া খেয়াঘাটে একজন হকার হিসেবে মাস্ক () বিক্রি করার সময়, হঠাৎ আমার পায়ের একটা জুতা ছিড়ে যায়। মাস্ক পড়া অবস্থায় এবং ঐ ছিড়ে জুতা নিয়ে মাস্ক বিক্রির সময় চিল্লায়া চিল্লায়া লোকজন কে ডাকতেছিলাম (“এই মাস্ক”), তখন আমার এক ছাত্রীর মা (লাস্ট পড়িয়েছিলাম ২০১৮ তে) সামনে এসে হাজির। ছাত্রীর মা খেয়াঘাট থেকে যাওয়ার সময় বারবার আমার দিকে তাকাচ্ছিল এবং এক পর্যায়ে আমাকে দাড়িয়ে দেখতেছিল। পরে আমি লজ্জায় ঐখান থেকে সরে গিয়েছিলাম। যদিও মাস্ক পরা ছিলাম কিন্তু সে আমাকে ঠিকই চিনতে পেরেছিল।
একই সাথে নিজের পড়াশুনা + পরিবারের ভরনপোষণের দায়িত্বটা খুবই চ্যালেঞ্জিং ছিল। প্রথমে জিআরই দেই (শুধুমাত্র ম্যাথের প্রিপারেশন নিয়েছিলাম, ভারবালের জন্য শুধু ভোকাবুলারি পড়েছিলাম) কিন্তু রেজাল্ট খুবই খারাপ আসলো (জিআরই: ২৯১)। পরীক্ষার হলে স্কোর দেখে অনেক কান্নাকাটি করেছিলাম। কারণ আমার ২য় বার আবার জিআরই দেওয়ার সামর্থ্য ছিলনা। জিআরই আর আইইএলটিএস দেওয়ার জন্য ব্যাংক থেকে ৫০,০০০ টাকা লোন নিয়েছিলাম।
পরবর্তীতে অর্থ সঙ্কটের কারনে আবার জিআরই দেওয়ার মত পরিস্থিতি ছিলনা। অনেকের পরামর্শে আইইএলটিএসের প্রিপারেশন নেওয়া শুরু করলাম। বাসায় কেমব্রিজের বই থেকে মক টেস্ট দিতাম ভালোই হত। পরে একটা ডেট নিয়ে পরীক্ষা দিলাম, এবারো রেজাল্ট খারাপ আসলো (আইইএলটিএস: ৬.০)। এবার ইউএসএ পড়াশোনার আশা একেবারেই ছেড়ে দিয়েছিলাম। আমি ১৫-১৬ টা ইউনিভার্সিটির একটা লিস্ট করেছিলাম যেখানে দেখতে পেলাম ৪ টা ইউনিভার্সিটি আছে যেগুলোতে ভর্তির জন্য আইইএলটিএসে মিনিমাম ৬.০ লাগবে। পরে প্লান করি এই ৪ টা ভার্সিটিতেই আবেদন করব।
Also read: Success Story: 3000£ স্কলারশিপসহ University of Greenwich UK তে Redwan Rafid
পরবর্তীতে এক ভাইকে (ইউএসে পড়েন) আমার প্লানটা বলি। উনি ঐ সময় আমাকে অনেক বুজিয়েছেন এবং এই স্কোর দিয়ে আবেদন না করার পরামর্শ দিয়েছেন। করলে শুধু ভর্তির অফার পাব কিন্তু কোনো ফান্ডিং পাবনা। ভাইয়ের একটা কথা আজও মনে পড়ে: আইইএলটিএসে ভালো একটা স্কোর করেন লাইফটা ১০ গুন ইজি হয়ে যাবে এখানে আসলে ওনার ঐ কথাটা আমার হৃদয়ে খুব গেঁথেছিল। এরপর আবার আইইএলটিএসের প্রিপারেশন নেই। গত বছর (২০২২) জানুয়ারি ১৫ তারিখে আইইএলটিএস পরীক্ষা দেই। আল্লাহর রহমতে জানুয়ারি ২৮ তারিখে রেজাল্ট পাই। এবার স্কোর আসলো ৬.৫। এই স্কোরেই আমি অনেক খুশি হয়ে যাই। এবার নিজের ভিতরে একটা আত্নবিশ্বাস আসলো, আমি আমেরিকা পড়াশোনা করতে পারবো
আল্লাহর নাম নিয়ে ১২ টা ভার্সিটিতে মাস্টার্সে ভর্তির জন্য ফেব্রুয়ারী ১৫ তারিখের মধ্যে আবেদন করি, এরমধ্যে ১০ টা ভার্সিটি থেকে ভর্তির অফার পাই। কিছু ভার্সিটি হাফ ফান্ডিং অফার করেছিল কিন্তু কেউই ফুল ফান্ডিং অফার করে নাই
এপ্রিলের ১৩ তারিখে Ohio University থেকে প্রোগ্রাম ডিরেক্টর ইমেইলে জানালো তারা আমেকে যে অফার দিয়েছে (১৪ লাখ ডেফিসিট) ঐ অফারে ভর্তি হতে ইচ্ছুক কিনা। পরে ঐ দিনেই আমি ইমেইলে জানিয়ে দেই যে, এই অফার আমার পক্ষে গ্রহণ করা সম্ভব না (আমার আর্থিক সঙ্কটের কথা উল্লেখ করেছিলাম)। তারপর এপ্রিলের ২১ তারিখে
অভিনন্দন জানিয়ে ফুল ফান্ডিংয়ের অফার করে
আমি জীবনে কল্পনাও করি নাই আমার এই ভার্সিটিতে আবার ফুল ফান্ডিং অফার করবে। আল্লাহ তাআলা আপনার রিজিকের ব্যবস্থা যেখানে করে রাখছেন সেখানে যেভাবে হোক হবেই হবে।
এখানে আসার পর প্রফেসরদের কথা বুজতাম না। প্রফেসরদের থেকে অনুমতি নিয়ে ক্লাস রেকর্ড করতাম এবং পড়াশোনার জন্য সারাদিন লাইব্রেরিতে থাকতাম। আল্লাহর রহমতে অনেক পরিশ্রমের ফল হিসেবে আমার জিপিএ আসল: ৩.৯১/৪.০০ (Fall and Spring semester each)
এরপর PhD ভর্তির জন্য প্রফেসরদেরকে (Ohio University + BU) ইমেইল দেই, তারা (+ আরো অনেক ভাইয়েরা) আমার SOP রিভিউ করে দেয়। ২০২৩ এর জানুয়ারি ১৫ তারিখ ৫ টা ভার্সিটি আবেদন করি। ২ টা থেকে ভর্তির অফার পাই। এরমধ্যে ১ টা (University of Georgia) থেকে Agricultural and Applied Economics এ ফুল ফান্ডিং অফার পাই।
সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে July 31 তারিখে University of Georgia তে ক্লাস শুরু করবো ইনশাআল্লাহ (আমার Ohio Universityর মাস্টার্স শেষ হবে August 19 )
My profile:
For Master’s admission:
Bachelor CGPA: 3.81 (BU)
GRE: 291
IELTS: 6.5
Publication: No
For PhD admission:
Master’s GPA: 3.91 ( Fall semester, OU)
Bachelor’s GPA: mentioned above
GRE: Same as previous
IELTS: Same as previous
LOR: from Ohio University
Publication: No
সর্বশেষ বলবো, সৃষ্টিকর্তার রহমত + নিজের ইচ্ছাশক্তি থাকলে, আর্থিক সঙ্কট কখনোই আপনার হায়ার স্টাডিতে বাধা হবেনা।
এখানে আসার সময় আত্মীয়স্বজনদের থেকে ৪ লাখ টাকার মত ঋণ করছিলাম। আল্লাহর রহমতে সব ঋণ পরিশোধ করেছি + পরিবারের জন্য পাঠাচ্ছি। এখন মনে হচ্ছে এখানে আসার পরে লাইফটা ১০ গুনের থেকেও বেশি ইজি হয়েছে
সবার জন্য অনেক অনেক শুভকামনা করছি
সুকান্ত ভট্টাচার্যের একটা উক্তি হঠাৎ মনে পড়ে গেল, “ক্ষুধার রাজ্যে পৃথিবী গদ্যময় পূর্ণিমার চাঁদ যেন ঝলসানাে রুটি”
মানুষের জীবন বড়ই বিচিত্রময়।
বি.দ্র: সে (আমার ছাত্রীর মা) আজও জানেনা যে, তার সেই মাস্টার আজ আমেরিকা পড়াশোনা করতেছে
One thought on “Success Story: মাস্ক বিক্রি থেকে এখন আমেরিকায় পিএইচডি”